মোঃ শরিফুল ইসলাম || বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে সারা দেশে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে সাথে বইছে ঝড়ো বাতাস।
আবহাওয়া অফিস বলছে,বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে শনিবার দিনভর বৃষ্টি হয়েছে, যা রাতেও অব্যাহত ছিল। বৃষ্টিপাতের এ ধারা আজ রোববারও অব্যাহত থাকতে পারে।
রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে পটুয়াখালীতে, ২২৩ মিলিমিটার।
সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন,সারাদেশে আজও বৃষ্টি থাকবে। কাল (সোমবার) থেকে কমতে পারে। সমুদ্র বন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস আরো জানায়, যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ঘনীভূত হয়ে গতকাল একই এলাকায় গভীর স্থল নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, টানা ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খুলনা নগরীর বিভিন্ন সড়ক। গত শুক্রবার থেকে চলা টানা বৃষ্টি আজ রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে।ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে গাড়ির চালক, যাত্রীসহ সাধারণ খেঁটে খাওয়া মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়,নগরীর শান্তিধাম মোড়, টুটপাড়া, বাইতিপাড়া, স্যার ইকবাল রোড, শামসুর রহমানরোড,রয়েলমোড়,সোনাডাঙা,মোল্লাবাড়ি, খালিশপুর, মুজগুন্নী, বাস্তুহারা কলোনি, হাউজিং এলাকা, ফুলবাড়ি গেট, রেলগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, নতুন রাস্তা মোড়, আলমনগর, নেভি চেকপোস্ট, রায়ের মহল, বয়রা বাজার, গল্লামারী, গোবরচাকা নবীনগর, মোড়সহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে হাঁটু সমান পানি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।গতকালের ভারী বর্ষণে ডুবে যাওয়া স্থানগুলো থেকে আজ পানি সরলেও এখনো নগরের বেশ কিছু স্থান ও সড়ক প্লাবিত হয়ে আছে। বেশ কিছু সড়কে সংস্কারকাজ চলমান থাকায় কাদাপানির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
নগরীর বেশকিছু নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে ইতিমধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছরে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। দায়ী করেন অপরিকল্পিত পরিকল্পনাকে।
এদিকে একই সঙ্গে নদীতে জোয়ার এবং বৃষ্টির পানির চাপে খুলনার বিভিন্ন উপজেলার কয়েকশ’ ঘের ও পুকুর ডুবে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।জেলার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও দাকোপ উপজেলার বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের হাজারো পরিবার।
স্থানীয় প্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কয়রা উপজেলার শতাধিক ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে।একইভাবে ডুমুরিয়ায় শতাধিক, দিঘলিয়ায়, দাকোপে অর্ধশতাধিক এবং রূপসা ও তেরখাদা উপজেলায় অসংখ্য মাছের ঘের এবং পুকুর তলিয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে শবজিখেতের।
গতকাল বিকাল থেকে বৃষ্টিতে নগরজুড়ে স্থবিরতা নেমে আসে। কাজে যেতে না পেরে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ বিপাকে পড়েন।দিনভর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মানুষ পারতপক্ষে ঘর থেকে বের হয়নি। বৃষ্টি কখনও কম, কখনো বেশি। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি সারা দিনে। নগরীর বড়বাজার ও অনেক অভিজাত মার্কেটের দোকানপাট প্রায় বন্ধ রয়েছে।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বৃষ্টির পানির কারণে রিকশা, মাহেন্দ্র ও ইজিবাইক চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এ ছাড়া দফায় দফায় চলছে লোডশেডিং। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর অধিকাংশ স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো কম। অফিস-আদালতগামী চাকরিজীবীদের পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।