সরদার বাদশা,নিজস্ব প্রতিবেদক || খুলনার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ নজরুল ইসলামের কর্মকান্ডে ঐতিহ্য সুনাম ক্ষুন্ন হতে চলেছে,দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটির।খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্জ তালুকদার আব্দুল খালেকের আস্তাভাজন হওয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন করে সিনিয়রকে বাদ দিয়ে সম্পুন্ন অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের(ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দেওয়া হয় ডাঃ নজরুল ইসলামকে।
তিনি পরিচালকের(ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে দেশের তথা দক্ষিণালের ঐতিহ্যবাহী এই সুনাধন্য প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসার সেবার মান অত্যান্ত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। প্রতিষ্ঠানের শৃংখলা সম্পুন্ন ভেঙ্গে পড়েছে দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ক্ষুন্ন হতে চলেছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের অদক্ষতায় এবং ভুল চিকিৎসায় অনেকেরই চোখের আলো নিভে গেছে এমনও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও অনেকে চোখের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে যাদের অনেকের চোখ তুলে ফেলতে হবে।
এই অবস্থায় স্থানীয় এবং প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন যুগযুগ থেকে সুনামের সাথে চোখের চিকিৎসা করে দক্ষিণাঞ্চলের সুনাম অর্জন করা একমাত্র প্রতিষ্ঠান খুলনার এই প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়া ডাঃ নজরুল ইসলামের কর্মকান্ডে এবং একের পর এক ভূল চিকিৎসায় প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তার অধিনস্থ কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ব্যবহার করে তাদের দিয়ে রোগীদেরকে পরিচালকের স্ত্রীর নামে করা দৌলতপুরে পলি চ্ক্ষু হাসপাতালে ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের বর্তমান চিকিৎসা সেবার মান এবং প্রতিষ্ঠানের শৃংখলা তলানিতে। পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) অধিনস্তদের অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে কাছে টেনে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসা সেবার মান যে সম্পুন্ন ভেঙ্গে পড়েছে তা বেশ কয়েকজন রোগির অভিযোগে উঠে এসেছে। খুলনার বাস্তহারা এলাকার হাবিবুর রহমান গত ১২ জুলাই চোখের ছানি অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি জানান, আমি অপারেশন হয়েছি দুই মাস দশ দিন হতে চলেছে। অপারেশনের আগে কিছুটা দেখতে পেতাম অপারেশনের পর আমি এখন চোখে দেখতে পাচ্ছি না। ডাক্তার যে ঔষধ দিয়েছে তা খেয়ে আমি পাগলের মতো হয়ে গেছি। পরে আমি আবার ডাক্তারের কাছে আসলেও আমার কোন সমাধান দিতে পারি নাই।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মোছাঃ আক্তারা খাতুন(৫৫) গত সপ্তাহে হাসপাতালের ডাঃ নজরুল ইসলামের কাছে অস্ত্রপাচার করেন। তিনি জানান অস্ত্রপাচারের আগে তিনি চোখে কিছুটা দেখেতে পেতেন কিন্তু অস্ত্রপাচারের পর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। আক্তারা খাতুনের স্বামী ফেরদৌস প্রবাহকে বলেন, আমার স্ত্রী শিরোমণি বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ডাঃ নজরুল ইসলামের কাছে চোখের অপারেশন করান। অপারেশনের পর আমার স্ত্রী এখন চোখে দেখতে পাচ্ছে না।
খুলনার দৌলতপুরের মানিক হাওলাদার (৫৫) সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানিক ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। এক চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়ায় গিয়েছিলেন খুলনার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের পর উল্টো নষ্ট হয়ে গেছে তার চোখ। একই অবস্থা সাতক্ষীরার আশাশুনির খুকুমণির (৭২)। অস্ত্রোপচারের এক দিনের মাথায় লেন্স খুলে আসায় যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন তিনি শুধু এই দুজনই নন,খুলনার সর্ববৃহৎ স্বায়ত্তশাসিত বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. নজরুল ইসলামের ‘লোভের বলি’ হয়ে গত ছয় মাসেই শতাধিক রোগীর চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়,হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ১০ শতাংশ এবং ক্যাম্পে অস্ত্রোপচার বাবদ ৬০০ টাকা করে নিতেন ডা. নজরুল ইসলাম। গত এক মাসে হাসপাতালটিতে চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছে ১ হাজার ৫৭টি। এর মধ্যে ২২টি চক্ষুসেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্যাম্পে অস্ত্রোপচার হয়েছে ৮০৭টি। আর হাসপাতাল থেকে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন ২৫০ জন। এর মধ্যে ডা. নজরুলের করা অস্ত্রোপচারে ২৯৯ রোগীর মধ্যে অন্তত ৪০ জনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অস্ত্রোপচার টেবিলে নষ্ট হয়েছে দুজনের চোখ। বাকিদের চোখ নষ্ট হয়েছে অস্ত্রোপচারের দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে। গত এক মাসে চোখ নষ্ট হয়েছে-এমন ২০ জন রোগীর তথ্য এসেছে কালবেলার হাতে।
এতে দেখা যায়,সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় করা ক্যাম্প থেকে আসা রোগীদের মধ্যে ষষ্ঠী রানী,ফরিদা,সুষমা,খুকুমণি,শাহীদা,মফিজুল,কেনাইগাজী, মুজিবুর রহমান,রোমেন হালদার,গোলাম রব্বানী,আনোয়ার কাজী,মফিজুর,হালিমা,ফাতেমা, টুনটুনি।চোখ হারানো ব্যক্তিদের অভিযোগ এতো কিছুর পরও অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাগ্রহণ বা কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি এতো বড়বড় গুরুতর অভিযোগের পরও প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারনে কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি।এই প্রতিষ্ঠানের অস্ত্রপচারের দেখভালের দায়িত্বে ছিলে বেসরকারি সংস্থা‘সাইড সেভারস’ নামের একটি সংস্থা এতো কিছুর পরও তাদের ভুমিকা নিয়ে সর্বমহলে নানা প্রশ্ন দেখে দিয়েছে।
অনুসন্ধানের আরো জানা যায়,ডাঃ নজরুল ইসলাম ১৯৯৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন । দীর্ঘদিন সাধারণ চিকিৎসক হিসেবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও ০১৬ সালে তিনি চট্টোগ্রামের একটি বেসরকারি চক্ষু হাসাপাতাল থেকে ডিপ্লোমা ইন কমিউনিটি অফ টেকনোলজি সার্টিফিকেট গ্রহন করেন। চিকিৎসকদের মধ্যে বিতর্কিত এই সার্টিফিকেট নিয়ে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্জ তালুকদার আব্দুল খালেকের খুবই আস্তাভাজন হওয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন করে তিনি পরিচালকের পদটি বাগিয়ে নেন। তিনি বোর্ড মিটিং এ পাস না করেই নিজেকে সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসাবে প্রচারের এক পর্যায়ে পদোন্নতি পেয়ে যান। তবে কখনো রোগীদের অস্ত্রোপচারের অনুমতি পাননি তিনি। ২০২১ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্জ তালুকদার আব্দুল খালেক বোর্ড অব ট্রাষ্টিজের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলে তৎকালিন পরিচালককে চাকুরীচ্যুত করে চেয়ারম্যানের আস্তাভাজন ডাঃ নজরুল ইসলামকে দায়িত্বে বসানো হয়।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনে পর ডাঃ নজরুল ইসলাম বিএনপির এক নেতার মাধ্যমে বিএনপি এবং বৈষষ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু নেতা-কর্মীদেরকে ভূল বুঝিয়ে ষড়যন্ত্র করে তার প্রতিপক্ষ মনে করে হাসপাতালের সব থেকে চৌকস, দক্ষ ও অভিজ্ঞ সুমানধন্য চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ সাইফুল ইসলামকে বানোয়াট ও মিথ্যা ভিত্তিহীন মনগড়া অভিযোগের ধুয়া তুলে প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। এছাড়াও পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিশেষ কিছু অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালকের নিজস্ব ক্লিানিক দৌলতপুরের পলি চক্ষুহাসপাতালে রোগী বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরিচালকের বিরুদ্ধে বড়বড় পুরাতন সকল গাছ কতৃন, টেন্ডার ছাড়াই বাসসহ বিভিন্ন মালামাল ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ সফিকুল ইসলাম জানান, এই প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের কোন চিকিৎকের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।