মোঃ ফসিয়ার রহমান // পাইকগাছায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লবণ সহিষ্ণু ব্রি ধান-৬৭। ব্রি ধান-৬৭ লবণ সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল জাতের হওয়ায় এ জাতের ধান চাষ কৃষকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর বাড়ছে এ জাতের ধানের আবাদ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বিগত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে অনেক বেশি জমিতে ব্রি ধান-৬৭ আবাদ হয়েছে। মূলত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বোরো মৌসুমে চাষের জন্য লবণ সহিষ্ণু কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম ব্রি ধান-৬৭। লবণাক্ততার মাত্রাভেদ অনুযায়ী এ ধানের হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৩.৮-৭.৪ মেট্রিকটন পর্যন্ত হয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী গত বোরো মৌসুমে অত্র উপজেলায় ৪ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র ব্রি ধান-২৮ ছিল ২ হাজার ৮৯৫ হেক্টর। যেখানে ব্রি ধান-৬৭ ছিল মাত্র ৮৭০ হেক্টর। এবারের মৌসুমে ৫ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে যেখানে ব্রি ধান-৬৭ আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২৩৪ হেক্টর। বিগত বছরের চেয়ে ৩৬৪ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। আগামী মৌসুমে ৩৫-৪০% ব্রি ধান ৬৭ জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ব্রি ধান-৬৭ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো চারা অবস্থায় ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ১২-১৪ ডিএস মিটার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এ জাতটি অংগজ বৃদ্ধি থেকে প্রজনন পর্যায় পর্যন্ত লবণাক্ততা সংবেদনশীল সকল ধাপে ৮ ডিএস মিটার লবণাক্ততা সহ্য করে ফলন দিতে সক্ষম। যা প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাত ব্রি ধান-২৮ পারে না। এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৫০ দিন। ব্রি ধান-২৮ এর থেকে ১.৫ মেট্রিকটন উৎপাদন বেশি। এ ধানের চাল মাঝারি চিকন, সাদা ও ভাত ঝরঝরে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ এর উদ্যোগে উপকূলীয় বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে পানি সম্পদ ও মাটির লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ কর্মসূচির আওতায় মঙ্গলবার সকালে উপজেলার পুরাইকাটীতে ব্রি ধান-৬৭ জাতের প্রদর্শনীর উপর ফসল কর্তন ও কৃষক মাঠ দিবস আয়োজন করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজান কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ড. আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয় সাতক্ষীরার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তাহমিদ হাসান আনছারি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ মনিরুজ্জামান, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা কৃষি অফিষার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে কৃষি কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা বলেন, আগামীতে লবণাক্ততার কারণে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের কোন জায়গা পতিত থাকবে না। নতুন নতুন এলাকায় ব্রি ধান-৬৭ জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশের সামগ্রীক উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ তুহিন এর পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন গদাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়া, পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, সহকরী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহাজান আলী, উপসহকরী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, বিল্লাল হোসেন, মিন্টু রায়, ডল্টন রায়।
আরও উপস্থিত ছিলেন, অমিকা অধিকারী, মোঃ শাহাজান উদ্দীন মোড়ল, সাধক ঢালী, এস এম মফিজুর রহমান, এনামুল হক, ইয়াসিন আলী খান, ফকির তৈয়বুর রহমান মিঠু, দেবদাশ রায়, কৃষক শেখ আহসান আলী, আব্দুর সবুর মোড়ল, আব্দুস সামাদ, লালু বিশ্বাস। সাংবাদিক বৃন্দ সরকারি দপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ ও শত শত কৃষক কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।