নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা || বাণিজ্যিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নেই সরকারি মালিকানাধীন ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ওই সব ব্যাংকে প্রধান নির্বাহী পদ শূন্য রয়েছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর এসব ব্যাংকের এমডিদের সরিয়ে দেওয়া হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। দীর্ঘ দিন ধরে এমডি না থাকায় এতে ব্যাংকগুলোর সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এমডি না থাকায় এসব ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানরাও ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
জানা গেছে, এসব সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ২০০৯-১৪ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে সেটিতে নজিরবিহীন অর্থ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা সব জেনেও অনিয়ম ঠেকায়নি। ব্যাংকটির তখনকার এমডি কাজী ফখরুল ইসলামও ছিলেন এসবের সহযোগী। ব্যাংকটিতে এখনো ওই সব লুটপাটের ধকল চলছে। এটির ৬৫ শতাংশ ঋণ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ ৮ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের শেষ এমডি ছিলেন মো. আনিসুর রহমান, যিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০২১ সালের এপ্রিলে।
চরম নাজুক অবস্থায় আছে জনতা ব্যাংক। সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত এননটেক্স গ্রুপকে অর্থায়ন করে প্রথমে ব্যাংকটিকে বিপদে ফেলেন। তাকে পরের চেয়ারম্যানরাও অনুসরণ করে গেছেন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বড় গ্রাহক বেক্সিমকো গ্রুপ ঋণ নিতে বেপরোয়া আচরণ শুরু করে। এর কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ফলে জনতা ব্যাংকে গ্রুপটির ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজার কোটি টাকায়। করোনার পর নিয়েছেন ১২ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের বড় অংশ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে।
গত জুনে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ বা ৪৮ হাজার কোটি টাকায়, যা ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাংকে লম্বা সময় ধরে এমডি ছিলেন আবদুছ ছালাম আজাদ। ২০২৩ সালের এপ্রিলে যোগ দেন মো. আবদুল জব্বার। তাকে সরিয়ে দেওয়ায় জনতা ব্যাংক এখন এমডি শূন্য।
সূত্র জানায়,অগ্রণী ব্যাংকে দীর্ঘ সময় অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত চেয়ারম্যান ও শামস উল ইসলাম এমডি ছিলেন। তাদের সময়ে দেওয়া ঋণ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত জুনে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ ছাড়ায়, যা পরিমাণে ২১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ব্যাংকটির এমডির দায়িত্বে ছিলেন মো. মুরশেদুল কবীর। সম্প্রতি তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
অগ্রণী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ও সাবেক এমডি সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘সরকারি সব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ। অগ্রণী ব্যাংক কে আমি যেভাবে রেখে গিয়েছিলাম, সে অবস্থায় নেই। এ জন্য এখন নেতৃত্ব দিতে পারে ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কাউকে সরকারি ব্যাংকটির এমডি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। দক্ষ বোর্ড ও এমডিরাই ব্যাংকগুলোকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারেন।
এদিকে হলমার্ক কেলেঙ্কারি থেকে সোনালী ব্যাংক যে শিক্ষা নিয়েছে, তা ব্যাংকটির আর্থিক ভিত্তি মজবুত করতে ভূমিকা রেখেছে। ফলে ব্যাংকটি বড় ঋণ বিতরণে না ঝুঁকে ট্রেজারি ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে। ফলে নতুন করে কোনো ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমেছে। ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ১৫ শতাংশ এখন খেলাপি, যা আগে হলমার্কসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে গেছে। সম্প্রতি অপসারিত সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম ২০২২ সালের আগস্টে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
রূপালী ব্যাংকের ২৩ শতাংশ ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ ১০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। এই ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরও ২০২২ সালের আগস্ট থেকে দায়িত্বে ছিলেন। তাকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, সরকারি ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এ জন্য ব্যাপক রদবদল চলছে। আলোচ্য ছয় ব্যাংকের এমডি হওয়ার যোগ্য এমন ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকের বর্তমান ও অবসরে যাওয়া ডিএমডিদের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের দক্ষ ব্যাংকারদের নামও ভাবা হচ্ছে। কারণ, সরকারি খাতে ব্যাংক চালানোর মতো দক্ষ ও সৎ ডিএম ডি র ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করা হয়।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।