আল-হুদা মালী শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি || প্রতিনিয়ত লড়াই-সংগ্রাম করে বাঁচতে হয় উপকূলের মানুষদের। নারী পুরুষের দিনরাত সংগ্রামে জোগাড় হয় দু’মুঠো খাবার। বেশির ভাগেরই জানা নেই তাদের অধিকারের কথা। নোনাজলে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। তার পরও জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবনের নদ-নদীতে চিংড়ি রেণু আহরণ করছেন সাতক্ষীরা উপকূলের ১৫-২০ সহস্রাধিক নারী।উপকূলীয় এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ কোন না কোন ভাবে এই বনের ওপর নির্ভরশীল। বছর জুড়ে বনের মধ্যে বয়ে চলা নদ-নদীতে মাছ ধরার বৈধ পাশ, পোনা আহরণ, মাছ ধরে ও শুটকি বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে লাখো মানুষ।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা,পদ্মপুকুর,বুড়িগোয়ালীনি, মুন্সিগঞ্জ এবং রমজান ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার নারী প্রতিদিন সুন্দরবনের নদ-নদীতে চিংড়ি রেণু সংগ্রহ করেন। কর্মসংস্থানের অভাবে এসব নারী ঝুঁকি নিয়ে জীবিকা অর্জন করছেন। কখনো বাঘ, আবার কখনো কুমিরের আক্রমণের শিকারও হতে হয় তাদের। তাছাড়া দীর্ঘ সময় লবণ পানিতে থাকায় এসব নারীর জরায়ুসহ শারীরিক অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সুন্দরবন সংলগ্ন চকবারা গ্রামের গৃহবধূ তাসলিমা খাতুন ও হাফিজা বেগম জানান, বনে বাঘ, জলে কুমির জেনেও উপকূরীয় খোলপেটুয়া নদীতে ৮-১০ বছর ধরে তারা চিংড়ি রেণু আহরণ করে আসছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নদীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জাল টেনে একেকজন দেড় শত থেকে দুইশত টাকা উপার্জন করেন, যা তাদের সংসারে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এলাকায় চিংড়ি ঘের হওয়ার কারণে কৃষিকাজ তেমন নেই বললেই চলে। এ কারণে উপকূলীয় এলাকার পুরুষরা কাজ হারিয়ে দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছে।
শ্যামনগর সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইভা জানান, দীর্ঘ সময় কোনো নারী যদি নদীর লবণ পানিতে ভিজে থাকেন, তবে তার জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে। তাছাড়া অনিয়মিত মাসিক বা জরায়ুর ক্ষত বা শক্ত হয়ে যেতে পারে।তিনি আরও জানান, এছাড়া অন্যান্য চর্ম বা পানিবাহিত রোগও হতে পারে। মাঝেমধ্যে সুন্দরবন এলাকা থেকে এসব নারী চিকিৎসা নিতে এলে তাদের দীর্ঘক্ষণ নোনা পানিতে না থাকার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম মাকসুদুল আলম জানান, সুন্দরবনের উপকূল এলাকার নদ-নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে লাখো মানুষ। গাবুরা ইউনিয়নে কমপক্ষে চার হাজার হতদরিদ্র নারী সুন্দরবনের খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও কালিঞ্চি নদীতে চিংড়ি এবং পারশে মাছের রেণু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রেণু পোনা আহরণ করতে গিয়ে অনেকে বাঘ ও কুমিরের আক্রমণের শিকারও হন। তিনি আরও জানান, জীবনের ঝুকি নিয়ে তারা কর্মসংস্থানের অভাবে এসব নারী ঝুঁকি নিয়ে জীবিকা অর্জন করছেন।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।