নিজস্ব প্রতিনিধি// দুই বছর করোনার প্রকোপ,ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং দুই দফা অসময়ের বৃষ্টির ক্ষত কাটিয়ে যখন নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন ঝিকরগাছার গদখালীর ফুলচাষিরা ।তখন ওমিক্রন ফুলচাষিদের আবারও শঙ্কায় ফেলেছে ।
বিজয় দিবসে চাষিরা কিছুটা দাম পেলেও ওমিক্রন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে শুরু করেছে । ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালীর ফুলচাষিরা সাধারণত বিজয় দিবস , বসন্তবরণ , বিশ্ব ভালোবাসা দিবস , আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস , মহান শহিদ দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে ফুল বিক্রির বিষয়টি লক্ষ্য করে এর চাষ করেন । এ মৌসুমেও সে অনুযায়ী দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাষ শুরু করেন চাষিরা ।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কাঙ্ক্ষিত দামও পেয়েছিলেন তারা । কিন্তু করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন শঙ্কায় ফেলেছে তাদের ।
গদখালী ফুলের বাজারে গিয়ে দেখা যায় , ওমিক্রন প্রকোপের আগে ফুল যে দামে বিক্রি হয়েছিল , বর্তমান তা নেমে এসেছে ৪ ভাগের ১ ভাগে । বর্তমানে বাজারে প্রতি হাজার গাঁদাফুল বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা , যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় । গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২ টাকা , যা আগে বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে ৬ টাকায় । রজনীগন্ধা প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকায় , যা আগে ছিল ৭ থেকে ১০ টাকায় । রঙিন গ্লাডিওলাস প্রতিটি রঙভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৯ টাকায় , যা আগে ছিল ৯ থেকে ১৫ টাকায় । জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ টাকায় , যা আগে ছিল ৮ থেকে ১৫ টাকায় । কামিনীপাতা বিক্রি হচ্ছে প্রতি আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় , যা আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা । জিপসির আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায় , যা আগে বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৪৫ টাকায় । ফুল ব্যবসায়ী সেলিম রেজা বলেন , ওমিক্রন বাড়ায় সরকারি নির্দেশনার কারণে সামাজিক অনুষ্ঠান কমে গেছে । এতে ফুলের চাহিদা কমেছে , দামও কম । হাড়িয়া মাঠে একটি শেডে আট ধরনের জারবেরা ফুল তারার মতো ফুটে রয়েছে ।
এই ক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন শাহজান আলী । আগামী তিনটি দিবসের আগে এসব ফুল তুলবেন তিনি । শাহজান আলী বলেন , ‘ ওমিক্রন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দাম কমে গেছে । তাই ফুল তোলার মতো হলেও ওঠাচ্ছি না । যদি দাম ভালো পাই , তাহলে এই শেডের জারবেরা ফুল দুই লাখ টাকায় বিক্রি হবে । আর যে দুই বিঘায় গ্লাডিওলাস ও এক বিঘা জমিতে গাঁদা ফুল রয়েছে , সব মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো । ‘ ফুলকানন পানিসারা মাঠে দেখা যায় , ফুলচাষি আজিজুর রহমান সরদার জারবেরা খেতের আগাছা ওঠাচ্ছেন । তাঁর এক বিঘা জারবেরা , চন্দ্রমল্লিকা , চায়না গোলাপ , ১০ কাঠা গ্লাডিওলাস ও ১৫ কাঠা জমিতে গাঁদা ফুল রয়েছে । এই ফুলচাষি বলেন , করোনাভাইরাসের প্রকোপ , ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং দুই দফা অসময়ের বৃষ্টির ক্ষত কাটিয়ে গত বিজয় দিবসে দেড় লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি । আশা করছি আগামী তিনটি দিবসে অন্তত চার লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো । তবে ওমিক্রন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দাম কমে গেছে । যদি দাম আরও পড়ে যায় এবং লকডাউন শুরু হয় , তাহলে দায় – দেনার কারণে চরম আর্থিক সংকটে পড়তে হবে । আরও কথা হয় ফুলচাষি কুলিয়া গ্রামের শের আলী , হাড়িয়ার মোমেনা খাতুন ও ইমামুল হোসেন , বল্লার শামীম রেজা , রাশিদুল ইসলাম , আজিজুর রহমানের সঙ্গে । ইমামুল হোসেন বলেন , করোনাকালীন খেতে লাখ লাখ টাকার ফুল থাকতেও শেডের টিন বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়েছে । যদি ওমিক্রনের প্রকোপে আবার সে রকম অবস্থা হয় , তাহলে পথে বসতে হবে । ঝিকরগাছার গদখালী অঞ্চলে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১১ প্রকারের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় । পরীক্ষামূলকভাবে এক্সট্রোমা ও লিলিয়ামের চাষ শুরু হয়েছে । এই এলাকার ৬০০ পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত । এই অঞ্চলে প্রতিবছর সাড়ে তিনশ ’ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয় । দেশে উৎপাদিত ফুলের ৭০ ভাগ এই অঞ্চলে হয় ।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।