বেনাপোল প্রতিনিধি।। চাকুরী করে বেতন নেই তারপরও কোটিপতি, চলেন দামি গাড়িতে, থাকেন আলিশান বাড়িতে। কাস্টমস হাউসে চাকুরি করে বলে দাপিয়ে বেড়ায় গোটা বন্দর এলাকা। এদের কাছে অনেকটাই অসহায় সিএন্ডএফ এজেন্টরা। গোটা কাস্টমস ও বন্দর এলাকায় তারা রাম রাজত্ব কায়েম করেছিল। সিএন্ডএফ এজেন্টদের ভয় ভীতি দেখিয়ে আদায় করতেন লাখ লাখ টাকা। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কর্মরত ১৪০ জন নন গর্ভানমেন্টাল অর্গানাইজেশন (এনজিও) দের কথা লোক মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি বেনাপোল কাস্টমস হাউসের নবাগত কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেন যোগদান করার পর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা কাস্টমস হাউস থেকে এনজিও অপসারনের দাবি জানিয়ে আসলেও তৎকালীন সময়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এনজিও অপসারন করা সম্ভব হয়নি। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের নতুন কমিশনার যোগদান করার পর ১৪০ জন এনজিও কে বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে অপসারণ করা হয়। তবে তারা বের হলেও বাইরে থেকে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে।
সিএন্ড এফ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল কমিশনার দপ্তর থেকে শুরু করে শুল্কায়ন ও পরীক্ষন পযর্ন্ত প্রতিটি শাখায় দুই বা ততোধিক এনজিও অবস্থান করতো। আমদানি রফতানি বাণিজ্যে তাদের দ্বারা মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হতো। তাদের দ্বারা মুলত কাস্টমস কর্মকর্তারা অনৈতিক কর্মকান্ডে বেশি জড়িত হতো। ফলে এসব এনজিওরা অল্পদিনে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। শুণ্য থেকে কোটিপতি হতে বেশি সময় লাগেনি তাদের। অবৈধ্য টাকার গরমে সমাজ ও পারিবারিক জীবনে নানা অশান্তির সৃষ্টি করছে তারা। তবে এসব বহিরাগতদের আশ্রয়দাতা কাস্টমস সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমস হাউসের জনবল সংকট ছিল। এর আগে খুলনা ও যশোর কাস্টমস হাউস থেকে জনবল ধার করে কাস্টমস হাউসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। সে সময় বিভিন্ন কর্মকর্তারা অফিসের কার্যক্রমের সুবিধার্থে কিছু নিকট আত্মীয় কিংবা পরিচিত লোকজন এনজিও হিসাবে নিয়োগ দেন। আমদানি বা রফতানি পণ্যের ফাইল থেকে নিদিষ্ট হারে ঘুষ নির্ধারণ করে রেখেছে কাস্টমস কর্মকর্তারা। ফাইল প্রতি ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। আর কোনো কাগজপত্রে ক্রুটি থাকলে এ ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় লাখ টাকা থেকে শুরু করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে এ অর্থ কাস্টমস কর্মকর্তারা নিজে হাতে নেয় না। তাদের এনজিও কর্মীদের দিয়ে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে থাকে। এজন্য বড় একটা কমিশন পায় এ এনজিও সদস্যরা। ফলে এসব এনজিওরা অল্পদিনে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। শূন্য থেকে কোটিপতি হতে বেশি সময় লাগেনি তাদের। এখানে এসে জায়গা কিনে বিশাল বিশাল বাড়িও বানিয়ে এখানকার ¯’ায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছে তারা।
আমদানিকারক রবিউল ইসলাম জানান, ঘুষের কারণে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে দেশের বাজারে। এছাড়া ঘুষ বাণিজ্যের কারণে কাস্টমসের বড় একটা অঙ্কের রাজস্ব হারায় সরকার।
সাধারণ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী জানান, ঘুষ না দিলে কাস্টমস কর্মকর্তারা ফাইল দিনের পর দিন আটকে রাখে। প্রতিবাদ করলে আগের কাস্টমস কর্মকর্তারা লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিত। বাধ্য হয়ে কোনো অনিয়ম না থাকলেও নিদিষ্ট হারে ঘুষ দিতে হতো। নব নিযুক্ত কমিশনারের সময়ে এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাইছি।
সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী রুবেল জানান, চাকুরি করে বেতন নেই তারপরও কোটিপতি। চলেন দামি গাড়িতে, আলিশান বাড়িতে থাকে এনজিও সদস্যরা। কাস্টমস হাউসে চাকুরি করে বলে দাপিয়ে বেড়ায় গোটা বন্দর এলাকা। এদের কাছে অনেকটাই অসহায় সিএন্ডএফ এজেন্টরা। সিএন্ডএফ এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করতেন লাখ লাখ টাকা। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কর্মরত ১৪০ জন এনজিওর কথা লোক মুখে ঘুরে বেড়া”েছ। এনজিও সরানো হয়েছে। এবার তাদের আশ্রয় দাতা কাস্টমস সদস্যদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি
বেনাপোল কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এনজিও অপসারণের দাবি জানিয়ে আসলেই তৎকালীন সময়ের কর্মকর্তারা আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। সিএন্ডএফ এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা অপকর্মে সাথে এরা জড়িত। মূলত এদের কারণে আমদানি রফতানি বাণিজ্য মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হতো। আশাকরি কমিশনার তার এ সিন্ধান্তের কারণে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সহজীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের নাম প্রকাশে অনি”ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমস হাউসের জনবল সংকট ছিল। এর আগে খুলনা ও যশোর কাস্টমস হাউস থেকে জনবল ধার করে কাস্টমস হাউসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। সে সময় বিভিন্ন কর্মকর্তারা অফিসের কার্যক্রমের সুবিধার্থে কিছু নিকট আত্মীয় কিংবা পরিচিত লোকজন এনজিও হিসাবে নিয়োগ দেন। বর্তমান নতুন কমিশনারের এনজিও অপসারণ করতে শুরু করেছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।