খুলনার খবর || তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে জেলে ও পর্যটকদের পদচারণায় এখন মুখরিত পূর্ব সুন্দরবন। গত ১ লা পহেলা সেপ্টেম্বর ২৫ (সোমবার ) একদিনে কটকা পর্যটন কেন্দ্রে প্রায় তিন শতাধিক পর্যটকের আগমন ঘটে। অপরদিকে, গত দু’দিনে প্রায় ৮ শতাধিক জেলে সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে গেছেন।
পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের অন্যতম পর্যটন স্পট কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার মোঃ মতিউর রহমান গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইল ফোনে বলেন, “কটকা পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকের পদচারণায় আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে।”
তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার প্রথম দিন গত সোমবার কটকায় ৪টি জাহাজে করে প্রায় তিন শতাধিক পর্যটক আসেন। এখানে পর্যটকেরা জামতলা সী-বিচে সমুদ্র অবলোকন শেষে ওয়াচটাওয়ারে উঠে হরিণের পাল, বানরসহ বন্যপ্রাণী এবং সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সন্ধ্যায় পর্যটকেরা কটকা থেকে চলে গেছেন। আরো ৩/৪ শ’ পর্যটক কটকার পথে জাহাজে রয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এ সকল পর্যটকবাহী জাহাজ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কটকায় পৌঁছায় বলে ঐ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মাছ ও বণ্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবন বিভাগ সুন্দরবনে মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশে তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা জারী করে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, সুন্দরবনে তিন মাসের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরেছে। সোম ও মঙ্গলবার সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরার তিন শতাধিক পাশ (অনুমতি পত্র) ইস্যু করা হয়েছে। এ সকল পাশ নিয়ে প্রায় ৮ শতাধিক জেলে জাল ও নৌকা ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনে গেছেন। জেলেদের সার্বিক নিরাপত্তায় বনরক্ষীরা তাদের সার্বক্ষণিক টহল কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে স্টেশন কর্মকর্তা জানান।
তবে নিষেধাজ্ঞ শেষ হতে, না হতেই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হতে শুরু করেছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় বাড়ছে সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে। জমে উঠতে শুরু করেছে এ খাতসংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
খুলনার এভার গ্রীন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস,র প্রধান মাজহারুল ইসলাম কচি “খুলনার খবর “কে বলেন, অপরূপ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জোয়ার ভাটা, বনের সুন্দরী গাছ, বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী চিত্রা হরিণ আর বিচিত্ররূপের এ বনকে দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। ফলে কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে গেছে ট্যুর অপারেটরদের।

ঢাকা থেকে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা আবিদ ও আকাশ বলেন, সুন্দরবন ভ্রমণের স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে ছিলো। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি জীব-বৈচিত্রের আঁধার। সুন্দরবন শুধু দেশের নয়, বিশ্বের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই বন্ধুদের নিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে চলে এসেছি।
যেভাবে যাবেন: একদিনেই সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চান তাহলে, করমজল পর্যটন কেন্দ্রে যেতে পারেন। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/ননএসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুল সহ বিভিন্ন বিলাসবহুল বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। সুন্দরবনে পর্যটকরা ঢাকা থেকে খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত বিমানে যাওয়া যাবে, পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। খুলনায় নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে। মোংলা থেকে করমজল লঞ্চ বা ট্রলারে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ হওয়ায় দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ভ্রমণে তুলনামূলক খরচও কম। মোংলা থেকে ট্রলারে করে করমজল যেতে খরচ হবে ট্রলারপ্রতি এক হাজার ৫শ থেকে দুই হাজার ৫শ টাকা। হাড়বাড়িয়া যেতে খরচ হবে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। প্রতিটি ট্রলারে ২০ থেকে ৩০ জন পর্যন্ত যাওয়া যায়। সুন্দরবনে থাকতে হলে সাহায্য নিতে হবে ট্যুর অপারেটরদের। পাশাপাশি খুলনার বিআইডাক্লিউটিএ’র লঞ্চ ঘাট থেকে সুন্দরবনে যাওয়া যায়। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য সাধারণত তিনদিন দুই রাতের প্যাকেজ থাকে। ট্যুর অপারেটরস কর্তৃপক্ষ ভ্রমণের অনুমতি সহ সকল কিছুর দায়িত্ব নেবে। খুলনা ও মোংলায় রয়েছে এমন শতাধিক ট্যুর অপারেটর, ঢাকাতেও মিলবে।
প্যাকেজের আওতায় সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, জামতলা সমুদ্রসৈকত, দুবলারচর, হিরণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়। সুযোগ আছে খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে। একটি ট্রলারে ১০ থেকে ১৫ জনের মতো থাকার সুবিধা রয়েছে।
নিরাপত্তায় ট্রলারে থাকবেন বনরক্ষীরা, থাকবেন একজন গাইড। সাধারণত পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পট ঘুরে দেখানো হয়। ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনিও সময় করে বেরিয়ে যেতে পারেন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন থেকে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।