খুলনার খবর।।নগরীতে একই রাতে চারটি নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। নগরীর লবণচরা থানাধীন মোলাপাড়া দরবেশ মোল্লা লেনে নানী ও নাতী-নাতনীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যদিকে, নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন করিমনগর সৈয়দ আলী হোসেন স্কুলের পাশে পূর্ব শত্র“তার জেরধরে আলাউদ্দিন মৃধা নামের এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পৃথক এসব ঘটনা ঘটে। নিহত আলাউদ্দিন ওই এলাকার বাসিন্দা মনা মুন্সির ছেলে। আর নিহত নানী মহিতুন্নেসা (৫৫) রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের হান্নান শেখের স্ত্রী। আর নিহত শিশু মুস্তাকিন (৮) ও ফাতিহার (৬) পিতা মোলাপাড়া দরবেশ মোলা লেনের বাসিন্দা শিপার আহমেদ মুন। তিনি খুলনা চেম্বারের জনসংযোগ কর্মকর্তা।
পুলিশ প্রধান মোঃ বাহারুল আলম খুলনা সফরের মাত্র ২৪ ঘন্টা পার হতেই এ ধরনের লোমহর্ষ হত্যাকান্ডে আবারো উদ্বিগ্ন খুলনাবাসী। এ ঘটনার পর গত এক বছরে হত্যাকান্ডের সংখ্যা অর্ধশতাধিক অতিক্রম করলো।যুবক আলাউদ্দিন হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থলে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এস আই সুমন হাওলাদার জানান, আলাউদ্দিন করিমনগর এলাকার ইলোরা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন। সন্ধ্যায় তিনি স্ত্রীসহ ঘরের বারান্দার সিঁড়িতে বসে কথা বলছিলেন। এ সময় ৬/৭ জন দুর্বৃত্ত বাড়িতে ঢুকে আলাউদ্দিনের সাথে কথা বলতে থাকে। হঠাৎ তারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। দু’টি গুলি তার বুকে ও পেটে লাগে। পরে তারা ধারালো ছুরি দিয়ে তার গলায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিআইডিকে জানায়।
সুরতহাল শেষে লাশ উদ্ধার করা হবে বলে জানান এস আই সুমন। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, নিহত আলাউদ্দিন মাদক কারবারের সাথে জড়িত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মাত্র ১০ দিন আগে জামিনে মুক্তি পান। মুক্তির পর তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। তবে কোন কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে- তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশের অপর সূত্র জানিয়েছে, নিহত আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, মাদকসহ অন্তত ১৩টি মামলা রয়েছে।কেএমপির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) সুদর্শন কুমার রায় জানান, প্রাথমিকভাবে হত্যাকান্ডের মূলরহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে এটা পূর্ব শত্র“তার জের ধরে ঘটেছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে, নগরীর লবনচরা থানাধীন মোল্লাপাড়া দরবেশ মোল্লা লেনের একটি বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে বৃদ্ধ নানী ও নাতী-নাতনীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ছয় বছরের মুস্তাকিন ও ছয় বছরের ফাতিহা নানী মহিতুন্নেসার সাথে ছিল। নিহত মহিতুন্নেসা রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের হান্নান শেখের স্ত্রী। বড় মেয়ে রুবিয়ার ভাড়া বাসায় এ হত্যাকান্ডের শিকার হন তিনি।
পুলিশ এসব লাশ উদ্ধার করেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়েছেন।পাবিরারিক সূত্রে জানা গেছে, রুবিয়া খাতুন ও তার স্বামী তখন বাড়ি ছিলেন না। ঘটনার সময় বাড়িতে রুবিয়া খাতুনের মা মহিতুন্নেছা বেগম ও তার ছেলে, মেয়ে বাড়িতে ছিলেন। রুবিয়া ও তার স্বামী হান্নান শেখ সরকারি চাকুরি করায় রুবিয়া খাতুনের মাতা মহিতুন্নেছা বেগম তাদের বাড়িতে থাকেন এবং নাতি-নাতনিকে দেখাশোনা করেন। শিশুরা স্থানীয় মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী ছিল।
জানা গেছে, রুবিয়া খাতুন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির পদে কর্মরত। বাবা শিফার আহমেদ খুলনা চেম্বার অব কমার্সে চাকরি করতেন। রুবিয়া খাতুন ও তার স্বামী প্রতিদিন পেশাগত কাজ শেষে নগরীর ৩১নং ওয়ার্ডের দরবেশ মোল্লা গলির ভিতরের সড়কে একটি বাসা ভাড়া করে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ এ ‘ট্রিপল মার্ডার’ সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেনি। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান লবণচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সানওয়ার হুসাইন মাসুম।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।