মোঃ আলমগীর হোসেন,লোহাগড়া (নড়াইল) সংবাদদাতা // এক সময়ের বাণিজ্যিক বন্দর খ্যাত নড়াইলের কালিয়ার নবগঙ্গা নদীর বড়দিয়া-মহাজন খেয়া ঘাটটি এক বছর আগে ফেরিঘাটে রূপান্তর হলেও এখনো নৌকায় পারপারের ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারেনি স্থানীয়রা।
ঘাট নির্মাণ শেষে এক বছর আগে সেখানে দুটি ফেরি আনা হয়।দুই পারের পন্টুন এবং সংযোগ সড়কও নির্মিত হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এই ঘাটে ফেরি চালু হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। আর কর্তৃপক্ষ বলেছে, জনবল সংকটের কারণে ফেরি দুটি চালু করা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটের পাশ্চিম তীরে মহাজন বাজারসহ নড়াইল জেলা সদর ও লোহাগড়া উপজেলা এবং পূর্ব তীরে বড়দিয়া বাজারসহ নড়াগাতী থানা ও কালিয়া উপজেলা সদর। সাবেক এই বাণিজ্যিক বন্দরে রয়েছে একটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় টিনের বাজার হিসাবে খ্যাতি রয়েছে মহাজন বাজারের। অন্তত ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বড়দিয়া ও মহাজন বাজার দুটির বেশ খ্যাতি রয়েছে। বাজারে রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক ও এনজিওর কার্যালয়।
বড়দিয়ায় রয়েছে উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় খাদ্যগুদাম। এর আশপাশ ঘিরে রয়েছে মুন্সী মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজ, বড়দিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, ফজিলাতুনেচ্ছা মুজিব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাজন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও টোনা ইসলামিয়া মাদরাসাসহ ছোটবড় অন্তত ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত কয়েক বছরে নবগঙ্গার ভাঙনে বাজার দুটির একটি বড় অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
জনগুরুত্ব বিবেচনা করে ও স্থানীয়দের দাবি পূরণে বড়দিয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে ও মহাজন খেয়াঘাটের উত্তর পাশে নির্মিত হয়েছে একটি ফেরিঘাট। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে সচল এই ফেরি দুটি ঘাটেই বাঁধা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তা চালু হচ্ছে না।
মুন্সী মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্র আশিষ বিশ্বাস বলেন, ফেরি চালু না হওয়ায় আমাদের নদী পারাপারে সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হচ্ছে। এভাবে ফেলে রেখে ফেরি দুটি নষ্ট না করে কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করা।
স্থানীয় মাউলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রোজী হক বলেন, বড়দিয়া বাণিজ্যিক বন্দর হওয়ার কারণে আশপাশের জেলাগুলো থেকে এখানে বড় বড় ব্যবসায়ীরা মালামাল কিনতে আসতেন। ব্যবসায়ীক ও জনগুরুত্ব হিসেবে অনেক আগেই এখানে সেতু হওয়া কথা থাকলেও তা হয়নি। যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমন, জরুরি প্রয়োজনে মুমুর্ষূ রোগীদের উন্নত চিজিৎসার জন্য ঢাকা, খুলনা নিতে হলে ৩০/৩৫ কিলোমিটার ঘুরে চাপাইল সেতু ও বারইপাড়া ফেরিঘাট হতে হয়। প্রয়োজনমত প্রশাসনের গাড়ির চলাচলের ক্ষেত্রেও পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। তিনি দ্রুত ফেরি দুটি চালুর দাবি জানান।
মহাজন বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ খান বলেন, প্রসিদ্ধ এই টিনের বাজারে বহু দুর থেকে মানুষ টিন কিনতে আসেন। কিন্তু পরিবহন সমস্যার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই ফেরি ঘাটটি চালু হচ্ছেনা।
বড়দিয়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র সরকার বলেন, ফেরি চালু না হওয়ায় পণ্য পরিবহনের জন্য কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, পিকআপ, ট্রলি, ভ্যান, নছিমন চলতে পারছে না। খেয়া নৌকায় পণ্য পারাপারের জন্য কুলি দিয়ে পণ্য ওঠা নামানোয় ভোগান্তিসহ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নদী ভাঙণের কারণে খেয়াঘাটের দুই পাড়ই অসমতল হওয়ায় পণ্য নিয়ে ওঠা নামাও বেশ ঝুঁকিপূর্ণন হয়ে পড়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ফেরি চালুর দাবি করেছেন তিনি।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ নড়াইলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ বলেন, ফেরি দুটি এক বছর আগে এই ঘাটে আনা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।