মুন্সী মোয়াজ্জেম হোসেন,শালিখা থানা // মাগুরার শালিখায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা।নিয়ন্ত্রণে সুশীল সমাজের পক্ষে বাবর আলী বিশ্বাস নামের একজন সচেতন নাগরিক বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, শালিখাতে সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে ইট ভাটা। অধিকাংশ ভাটা পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়,ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইট ভাটার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।উপজেলায় মোট ইট ভাটার সংখ্যা ১২টি। যার মধ্যে ৩টি ইটভাটা ইতিমধ্যে বিভিন্ন কারনে বন্ধ হয়ে গেছে।
সরজমিনে ইট ভাটাগুলো ঘুরে দেখা গেছে,অবৈধভাবে ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা এসব ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। ফলে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বন,অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে জমি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে,আকারভেদে একটি ইট ভাটা গড়তে কমপক্ষে পাঁচ একর (৫০০ শতাংশ) জমি প্রয়োজন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ থেকে ৪৫ একর জমিরও প্রয়োজন হয়। আর এসব ইট ভাটা গড়ে ওঠার কারণে শতাধিক একর ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইট ভাটার ম্যানেজার জানালেন, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ভাটায় বছরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। সেই মাটির জোগান আসে কৃষি জমি থেকে। এজন্য প্রতিটি ভাটায় বছরে পাঁচ থেকে ছয় একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭-এর ৭ ধারা অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রথমবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও সাজার বিধান রাখা হয়েছে। তৃতীয়বার এ অপরাধের পুনরাবৃত্তিতে ভাটার নিবন্ধন বাতিল ও ভাটা বাজেয়াপ্ত করারও বিধান রাখা হয়েছে।
আড়পাড়া গ্রামের একজন সচেতন কৃষক ও পরিবেশ কর্মী বলেন,ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষেতের পাশে ইট ভাটা গড়ে ওঠায় আগের তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে। সরকার ফসলি জমির ওপর ইট ভাটা স্থাপন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পাঁচ বছরের মধ্যে এসব জমির উৎপাদন শূন্যে নেমে আসবে।স্থানীয়রা আরও বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে শ্বসনতন্ত্রের রোগব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অসুস্থতা বাড়ছে।
এ ব্যাপারে শালিখা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আব্বাস উদ্দিন বলেন, ইট ভাটার প্রভাবে স্থানীরা শ্বাস কষ্ট সহ নানা রোগের কথা জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। ফলে এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিকারকর্মী গবেষক শ্রী ইন্দ্র নীল বলেন, আমরা দেখেছি—প্রতিটি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কৃষি জমি এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেও গড়ে ওঠা অনেক ভাটায় স্বল্প উচ্চতার তৈরি চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এতে ফসলসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এরকম চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।
ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে অধিকাংশ ভাটার মালিক বলেন, চাহিদার তুলনায় কয়লার সরবরাহ কম। দামও বেশি। তাই কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে তাদের লভ্যাংশ কমে যায়। ফলে লাভ বাড়াতেই তারা কাঠ পুড়িয়ে থাকেন। সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা আমদানির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে সরবরাহ করতে পারলে তবেই ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধ করা যাবে বলে মনে করছেন তারা।
এ ব্যাপারে শালিখা উপজেলা কৃষি অফিসার আলমগির হোসেন বলেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটা হলে এর উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। চার-পাঁচ বছরের ব্যবধানে জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যায়।
এ ব্যাপারে শালিখার ইউএনও ইয়াসমিন মনিরা বলেন,আমি এখনও অভিযোগ পায়নি।পেলে ব্যাবস্থা নেব।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।