 
							
							 
                    খুলনার খবর।।২৮ আগস্ট-২০২৫ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, গত ৫৪ বছরে মানুষের মুক্তি আসে নি। মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে সমাজ বিপ্লব সম্পন্ন করতে হবে। তিনি এজন্য দেশের বিভিন্ন বামপন্থী দল সংগঠন ও সচেতন ব্যক্তিবর্গ কে নীতি-নিষ্ঠ রাজনীতির পতাকা তলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে কেউ পার পাবে না। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা। আজ যারা মুক্তিযুদ্ধ-ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিতর্কিত করছে তারা প্রকারান্তরে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। তিনি বলেন, শত শত মানুষের রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে, এই আকাঙ্খাকে পদদলিত করা যাবে না। বামপন্থী এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিকরা এই আকাঙ্খাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। পরাজিত করবে সাম্প্রদায়িক অগণতান্ত্রিক আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিকে।
তিনি বলেন, গণ অভ্যুত্থানের পর আমাদের সামনে গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যের সমাজের সংগ্রামকে অগ্রসর করার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল আজ সরকারের ভূমিকা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালনে তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে চলেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দেশের সচেতন জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি মব সন্ত্রাসের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, আমরা যে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকারের অবসান করলাম তা নতুন করে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নয়। তিনি সরকারকে এদের বিষয় কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন সরকার না চাইলে কেউ মব সন্ত্রাস করতে পারবে না।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একসময়ের শিল্পনগরী খুলনা আজ মৃত নগরীতে পরিণত হয়েছে। খালিশপুর থেকে শুরু করে রুপসা অঞ্চলে এই কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বন্ধ কলকারখানা বিশেষ করে বন্ধ পাটকল চালু করা সহ নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, খুলনা বস্তি নগরীতে পরিণত হোক এটা কেউ চায়না। কিন্তু যদি খুলনায় কর্মসংস্থান গড়ে না ওঠে শিক্ষার পরিবেশ ভালো না করা যায়, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং মানুষের বিনোদনের পরিবেশ নিশ্চিত না করা যায় তাহলে এই খুলনার উন্নয়ন করা যাবে না। তিনি খুলনাকে দক্ষ সমতাভিত্তিক নগরী হিসাবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
রুহিন হোসেন প্রিন্স জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, আর কালক্ষেপন না করে যে সব বিষয়ে সবদল একমত হয়েছে, এসব বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম অগ্রসর করুন। মনে রাখতে হবে সংবিধান সংশোধন করার বিষয়ে একমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই বিবেচনা করতে পারেন। এর বাইরে অন্য কিছু করতে চাইলে তা দেশবাসী গ্রহণ করবে না। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানের মূল মূলনীতি ছলে বলে কৌশলে বাদ দেওয়ার যে কোন ষড়যন্ত্র দেশবাসী রুখে দাঁড়াবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক কিছু নিয়ে আলাপ হল কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, কৃষক ক্ষেতমজুরের স্বার্থ নিয়ে কোন কথা বলো না। তিনি বলেন, তেঁতুল গাছ লাগিয়ে মিষ্টি আম চাইলে যেমন লাভ হয় না তেমনি বড়লোকের স্বার্থ রক্ষাকারী দলগুলোর কাছ থেকে সাধারণ মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষা চাইলে তাও কাজে লাগবে না।  এজন্য তিনি গরিব মেহনতি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টিতে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান ।
তিনি নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা কে ইতিবাচক হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নির্বাচনমুখী দৃশ্যমান কাজের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচন বিরোধী যে কোন অপ তৎপরতা সরকারকেই উঠে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের বাইরে অন্য কোন তালবাহানা গ্রহণযোগ্য হবে না। অনেকে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চাইবে। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হবে ওদিকে না তাকিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করে দেশের মানুষকে নির্বাচনমুখী করার কাজকে অগ্রধিকার দেওয়া। একই সাথে সরকারকে বাণিজ্য চুক্তির নামে আমেরিকার সাথে গোপন চুক্তি, রাখাইনে করিডোর দেওয়া, বিদেশীদের বন্দর দেওয়া সহ জনগণের স্বার্থবিরোধী সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।
আজ ২৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিকাল পাঁচটায় খুলনা শহীদ হাদিস পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে পার্টির দ্বাদশ খুলনা জেলা সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন ঘোষণা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। এরপর সিপিবির খুলনা জেলার সভাপতি ডাক্তার মনোজ দাসের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল হান্নান, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এইচ এম শাহাদাত, মিজানুর রহমান বাবু, সুতপা বেদজ্ঞ, ডা এস এম ফরিদুজ্জামান, অশোক সরকার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এ রশিদ।
সমাবেশের পূর্বে দীর্ঘক্ষণ ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা মহানগর সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মানুষ লাল পতাকা হাতে মিছিল করে এই সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর রাতে খুলনা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়েছে। আগামীকাল ২৯ আগস্টও কাউন্সিল অধিবেশন চলবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।